মানসিক স্বাস্থ্য: নারী ও পুরুষে পার্থক্য
মনের কষ্ট প্রকাশের ধরণ
পুরুষ ও নারীর মধ্যে মন খারাপ বা কষ্টের কথা বলার ধরনে বড় পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত, মেয়েরা তাদের দুঃখ, টেনশন (উদ্বেগ) বা বিষণ্নতার কথা সহজে প্রকাশ করতে পারে। তারা প্রায়ই অন্যদের সাথে এগুলো নিয়ে কথা বলে। অন্যদিকে, ছেলেদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় যে তাদের 'শক্ত' থাকতে হবে এবং সহজে আবেগ দেখানো যাবে না। তাই, কোনো পুরুষের মনে কষ্ট থাকলে তা সরাসরি দুঃখ হয়ে বের হয় না। বরং তা রাগ, খারাপ ব্যবহার, অতিরিক্ত মদ খাওয়া বা জুয়া খেলার মতো বাজে অভ্যাসের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। এই সামাজিক চাপগুলোর কারণে পুরুষেরা সাহায্য চাইতে বা নিজেদের কষ্ট বুঝতে অনেক সময় দেরি করে ফেলে।
রোগ ও কারণের ভিন্নতা
কিছু মানসিক রোগ নারী ও পুরুষের মধ্যে আলাদাভাবে বেশি দেখা যায়। সারা বিশ্বের তথ্য অনুযায়ী, বেশি মন খারাপ বা বিষণ্নতা (Depression) এবং অতিরিক্ত টেনশন বা ভয় (Anxiety)-এর সমস্যা মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে নেশা করার অভ্যাস (আসক্তি), জুয়া খেলার নেশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা (যদিও মেয়েরা বেশি চেষ্টা করে) বেশি দেখা যায়। এই ভিন্নতা শুধু শরীরের গঠনের কারণে নয়, বরং নারী-পুরুষের সামাজিক ভূমিকা, টাকার চিন্তা এবং জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনার (যেমন সন্তান জন্মের পর মন খারাপ) কারণেও হয়ে থাকে। এই পার্থক্যগুলো জানা থাকলে সঠিক চিকিৎসা পেতে সুবিধা হয়।
সাহায্যের জন্য চাই বিশেষ ভাবনা
নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা এবং সাহায্য পাওয়া খুব দরকার। তবে সাহায্য করার পদ্ধতিও কিছুটা আলাদা হতে হবে। পুরুষদের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা কোনো ভয় না পেয়ে নিজের দুর্বলতা বা মানসিক চাপ নিয়ে কথা বলতে পারে। সমাজে যে ধারণা আছে যে 'ছেলেদের কাঁদতে নেই' বা 'ছেলেরা দুর্বল হতে পারে না', সেটা বদলানো দরকার। অন্যদিকে, মহিলাদের টেনশন বা মন খারাপের কথা যেন কেউ 'নাটক' বলে উড়িয়ে না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবাই যাতে সহজে এবং সময় মতো সাহায্য পায়, তার জন্য নারী ও পুরুষের জীবনযাত্রা ও আবেগের প্রকাশভঙ্গি বুঝে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া উচিত।


Comments
Post a Comment