হতাশা এক ধরনের মানসিক অবস্থা। যখন ব্যক্তি জীবনের প্রতি সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, আশা দেখতে না পায়, নিজের সম্বন্ধে, অন্যের সম্বন্ধে, এমন কি সমগ্র পৃথিবী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে এবং এই অবস্থা যদি অন্তত ১৫ দিন বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন তাকে হতাশা বলে। হতাশা বাড়তে বাড়তে বিষণ্ণতার দিকে চলে যায়। তবে সমস্যা হয় তখনই যখন এটি কাটিয়ে উঠতে একজন ব্যক্তিকে নিজের সাথে ভীষণ লড়াই করতে হয়। হতাশা কেন হয় ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সালমা পারভিন বলেন ।দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে হতাশা কাজ করতে পারে।কারো কারো ব্যক্তিত্বের ধরনই নেতিবাচক থাকে। তারা হতাশবোধ করে।সমস্যা মোকাবিলা করার দক্ষতা কম থাকলে ভয় পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কম থাকলেও সমস্যার মধ্যে আটকে যায়, ঘুরপাক খেতে থাকে হতাশার ভেতর।কারো কারো চিন্তার মধ্যে ত্রুটি থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় সে ব্যর্থ হলে, সে ভাবে সারা জীবন সে ব্যর্থ হবে। একবার একটি কাজ না পারলে দ্রুত উপসংহারে পৌঁছে যায়, ভাবে কিছু হবে না। এসব ভেবে হতাশ হয়।অনেকে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখে। আর এগুলো ভাবতে ভাবতে হতাশার মধ্যে ডুবে যায়।কখনো কখনো একাকীত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।
অনুভূতি শেয়ার করার মতো কাউকে পায় না, পারিবারিক সাহায্য থাকে না, তখন হতাশ হয়ে যায়।পরিবার থেকে যদি সারাক্ষণ দোষারোপ করতে থাকে, বিপদে পড়লে ব্যক্তিকে সাহায্য না করে, তখন ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়, তখন উদ্যোগ নেওয়া ছেড়ে দেয় এবং হতাশ হয়।অনেক সময় বেকারত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে মানুষ হতাশ হয়।সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেও অনেক সময় মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।লেখাপড়ায় অকার্যকারিতার জন্য মানুষ হতাশ হয়।হতাশ হলে ব্যক্তির মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা দেয় ব্যক্তি মনমরা হয়ে থাকে। কোনো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে পায় না মনোযোগের অভাব ঘটে।ঘুমের সমস্যা হতে পারে। খাওয়ার সমস্যা হতে পারে।আবেগের তারতম্য হতে পারে। অনেক সময় দুর্বল লাগে।মাথা ঘোরে।পেট গুলায়।কাজের গতি কমে যায়।ব্যক্তি অন্যমনষ্ক থাকে।কাজের গতি কমে যায়।নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হয়।
কীভাবে দূর করবেন হতাশা
হতাশা দূর করতে হলে দুইভাবে করতে হবে জানিয়ে সালমা পারভীন বলেন,আচরণ ও চিন্তার পরিবর্তন করতে হবে। জোর করে কাজে ঢুকতে হবে। আনন্দদায়ক কাজ বেশি বেশি করে করতে হবে। এ ছাড়া হতাশা কাটাতে আরো যা করতে পারেন ।
কোপিং কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। একটি কার্ডের মধ্যে ইতিবাচক কথা লিখে সামনে রাখতে পারেন। যেমন : এই অবস্থা থেকে অবশ্যই আমার মুক্তি হবে।
নিজের ভালো দিকগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। সেই জিনিসগুলোর প্রতি আলোকপাত করুন। এগুলো দেখলে আত্মবিশ্বাস আসতে পারে। আর যেটা এখনো নেই, যার জন্য হতাশ বোধ করছেন সেটা করার চেষ্টা করুন।
সারাক্ষণ নেতিবাচক চিন্তা না করে ইতিবাচক চিন্তা করুন। যদি হতাশার কারণ পরিবারের ব্যক্তিদের আচরণ হয়, তাহলে তাদের সাথে কথা বলতে হবে। সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। নিজেকে একা করে না ফেলে সমাজের লোকদের সাথে মিশতে হবে। মানুষের সাথে মিশতে হবে। আমি এই সমস্যা অতিক্রম করব। এই রকম একটি মানসিক শক্তি ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে আনতে হবে।
সুত্রঃ এনটিভি অনলাইন
Comments
Post a Comment